সোনাগাজী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে বিনামূল্যের বই বিতরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়ে বই নিতে বাধ্য হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তবে বই না পাওয়ার ভয়ে কেউ এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাইছে না।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোনাগাজী উপজেলায় ২৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৯টি দাখিল মাদ্রাসা ও চারটি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। এছাড়া নন-এমপিও ও স্বীকৃতিহীন ১৫টি কিন্ডারগার্টেন ও অন্তত ৩০টি মাদ্রাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সরকার ২০২৩ সালের নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী বিনামূল্যে বিতরণের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বই সরবরাহ করেছে। কিন্তু ওই কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কর্মচারীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বই নিতে আসা শিক্ষকদের নগদ টাকা দিতে বাধ্য করছেন। এক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের থেকে টাকা আদায়ের জন্য জবরদস্তি না করলেও নন-এমপিও এবং স্বীকৃতিহীন প্রতিষ্ঠান থেকে ১-২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান জানান, শিক্ষা অফিসে টাকা না দিলে বই দেবে না। আমাদের প্রতিষ্ঠানের এমপিও অথবা স্বীকৃতি না থাকলেও নানা কাজে শিক্ষা অফিসে আমাদের সুসম্পর্ক রাখতে হয়। তাই তাদের দাবীকৃত টাকা দিয়েই বইগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্টরা আরো জানান, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের নতুন বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বিতরণের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহায়ক আবুল বশর ও নৈশপ্রহরী মানিককে। তারা বিতরণের সময় বই গ্রহণ করতে আসা শিক্ষকদের কাছ থেকে বই বহনের ভাড়া বাবদ ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। এছাড়া দুপুরে খাওয়ার নাম করে আলাদাভাবে ২০০ টাকা করে আদায় করছেন।
অভিযুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহায়ক আবুল বশর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্য অভিযুক্ত মানিক বলেন, ‘অনেকে চা-নাশতার জন্য অল্প কিছু টাকা দিয়েছেন। আমরা কারো কাছ থেকে বাধ্য করে টাকা নিইনি।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সদস্যসচিব ও বিষ্ণপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসেন মোহাম্মদ আলমগীর সেলফোনে বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি আমি জেনেছি। তবে আমার প্রতিষ্ঠান থেকে দুপুরে খাওয়ার জন্য শুধু ২০০ টাকা নিয়েছে। তারা অফিস ডেকোরেটর, টাইলসকরণ ইত্যাদি বলে টাকা আদায় করে থাকে।’
এ বিষয়ে সোনাগাজী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির আহবায়ক ও বক্তারমুন্সি মোয়াজ্জম হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল আলম বলেন, বই গ্রহনে টাকা না দেয়ার জন্য আমরা সমিতি থেকে সব সময় বলে থাকি। তারপরও অনেকে টাকা দেন যা দুঃখজনক।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আমিন বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বই নিতে আসা ব্যক্তিরা পিয়নকে চা-নাশতার জন্য ২০-৫০ টাকা দিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু টাকা দিতে বাধ্য করার বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। তার পরও আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহি কর্মকতা কামরুল হাসান জানান, সরকারি বই বিতরণ নীতিমালা অনুযায়ী কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নেয়ার সুযোগ নেই। কেউ টাকা আদায় করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহ বলেন, ‘বিনামূল্যে বইয়ের জন্য কেউ টাকা গ্রহণ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা
Leave a Reply